চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ছে রাশিয়া ও চীন
চাঁদে আধিপত্য বিস্তারে এবার যৌথভাবে কাজ করছে রাশিয়া ও চীন। দুই দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস (রাশিয়া) এবং চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) সম্প্রতি একটি সমঝোতাপত্রে সই করেছে, যার লক্ষ্য—চাঁদে একটি স্বয়ংক্রিয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ‘ইন্টারন্যাশনাল লুনার রিসার্চ স্টেশন’ (আইএলআরএস) নামের প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণাকেন্দ্রের একটি অংশ হবে। যদিও এটি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
২০২৪ সালের ৮ মে রসকসমস এক বিবৃতিতে জানায়, এই কেন্দ্র নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো—চাঁদে দীর্ঘমেয়াদে মানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা এবং মৌলিক মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়ন। এতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কী ভূমিকা থাকবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
প্রকল্পটি প্রথম সামনে আনেন রসকসমস প্রধান ইউরি বোরিসভ। তিনি জানান, চাঁদে পরমাণু চুল্লি স্থাপনের পাশাপাশি আণবিক শক্তিচালিত মালবাহী মহাকাশযান তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। এই যান চাঁদের পৃষ্ঠে চুল্লি ও টারবাইন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে সামগ্রী পরিবহনের কাজেও ব্যবহৃত হবে। এমনকি মহাকাশের জঞ্জাল পরিষ্কার করতেও একে কাজে লাগানো হবে।
তবে ইউরি স্বীকার করেছেন, চাঁদের মতো পরিবেশে পরমাণু চুল্লিকে ঠান্ডা রাখার প্রযুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বের একাধিক দেশ ইতোমধ্যেই আইএলআরএস-এ অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভেনেজুয়েলা, বেলারুশ, আজারবাইজান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, নিকারাগুয়া, থাইল্যান্ড, সার্বিয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল এবং কাজাখস্তান—এই প্রকল্পে সম্ভাব্য অংশীদার হতে পারে। ফলে অর্থের ঘাটতির আশঙ্কা কম বলেই মনে করছে রাশিয়া ও চীন।
প্রস্তাবিত গবেষণা কেন্দ্রটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে নির্মিত হবে। এখানে দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে মানব মিশনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাশিয়া ও চীনের চন্দ্র অভিযানের ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। চীনই প্রথম দেশ, যারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করিয়েছে। অপরদিকে, রাশিয়ার রয়েছে পৃথিবীর বাইরে মানুষ পাঠানোর ঐতিহাসিক রেকর্ড। যদিও ২০২৩ সালে রসকসমস ও সিএনএসএ মিলে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে রাশিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণের পেছনে অন্যতম কারণ হলো—সেই অঞ্চলে পানির সম্ভাব্য অস্তিত্ব। ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-১-ই প্রথম চাঁদে পানির চিহ্ন খুঁজে পাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে।
এই মুহূর্তে যখন রাশিয়া ও চীন মহাকাশ অভিযানে জোট গড়ছে, তখন কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের ২০২৬ সালের চন্দ্র প্রকল্প বাতিল হওয়ার পথে। যদিও ‘আর্তেমিস’ প্রকল্পে নাসা নতুন রকেট তৈরিতে বোয়িং এবং নর্থরপ গ্রুমম্যানের সহযোগিতা নিচ্ছে, তবে এটি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
১৯৬৯ সালে নাসার অ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন প্রথমবার চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনের আগ্রাসী পরিকল্পনার কারণে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স
কোন মন্তব্য নেই