দাবানল কে সৃষ্টি করে?
আমাদের পৃথিবী উষ্ণ হয়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে বন উজাড়ের ফলে পরিবেশের এমন ক্ষতি হয়েছে যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একসময় গাছগাছালিতে ঢাকা পৃথিবী আজ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।
গাছ কাটা ও জলবায়ুর বিপর্যয়
গাছ কাটাই প্রাকৃতিক
বিপর্যয়ের মূল কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল,
আর বাড়ছে জলবায়ুর সংকট। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে বিপুল পরিমাণ
কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে,
তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শোষণ
করে গাছ। বন কমতে
থাকায় পৃথিবীর এই প্রতিরোধ ক্ষমতাও
হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, ১৯৯০ সাল
থেকে ২০২০ সালের মধ্যে
প্রায় ১০০ কোটি একর
(৪২ কোটি হেক্টর) বন
উজাড় হয়েছে—যার আয়তন লিবিয়ার
সমান।
আমাজন বন: পৃথিবীর ফুসফুস সংকটে
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন আমাজন গত
এক দশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। ২০২০ এবং ২০২১
সালে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট বলসোরানোর
শাসনামলে, এই বন উজাড়ের
হার বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা
বলছেন, শুধুমাত্র আমাজন প্রতিবছর লাখ লাখ টন
কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ
করে। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতা
ছাড়া এই বন রক্ষা
করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
গাছ রোপণ ও পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ
একটি পরিপূর্ণ গাছ
বছরে প্রায় ২১ কেজি কার্বন
শোষণ করতে পারে। তবে
একটি গাছ পূর্ণবয়স্ক হতে
অন্তত ২০ বছর সময়
লাগে। আজ যে গাছ
লাগানো হচ্ছে, তা আগামী দুই
দশকের আগে কার্বন শোষণে
সক্ষম হবে না। চীনা
প্রবাদে বলা হয়, “গাছ
লাগানোর সেরা সময় ছিল
২০ বছর আগে। দ্বিতীয়
সেরা সময় হলো এখনই।”
দাবানল: বন উজাড়ের আরেক বিপদ
দাবানল হচ্ছে এমন এক ধ্বংসাত্মক
আগুন, যা বনাঞ্চল ও
গ্রামীণ এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন শুষ্ক
ও গরম আবহাওয়ার কারণে
গাছপালা পানির অভাব দেখা দেয়,
যা গাছকে শুষ্ক ও দাহ্য করে
তোলে। পাহাড়ি এলাকায় দাবানল সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী। দাবানলের
আগুন যখন নিভে যায়,
তখন পোড়া মাটি পানির
শোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টির
পানিতে পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকিও
বেড়ে যায়।
দাবানলের পিছনে মানুষের ভূমিকা
আমেরিকার বনাঞ্চলে বছরে প্রায় হাজারবার
দাবানল দেখা দেয়, যার
চার ভাগের তিন ভাগ মানুষের
তৈরি। অসতর্কভাবে ফেলে রাখা ক্যাম্পফায়ারের
আগুন কিংবা সিগারেটের অবশিষ্টাংশ থেকে শুরু হওয়া
দাবানল ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রকৃতি
একবার আগুন পেলে তা
আগুনের ঘূর্ণিঝড় বা অগ্নি-টর্নেডোতে
রূপ নিয়ে আরও ধ্বংস
ছড়ায়।
কৃষিকাজ ও বন উজাড়
গত ৩০ বছরে
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, আফ্রিকার কঙ্গো বর্ষাবন এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার
বিশাল বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃষিজমি তৈরি
করা হয়েছে। তবে উর্বরতা দ্রুত
কমে যাওয়ায়, আবার নতুন বনাঞ্চল
পোড়াতে হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ কী?
জলবায়ুর এই ভয়াবহ পরিবর্তন
রোধে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে
হবে। গাছ লাগানো, বন
রক্ষা এবং মানুষের সচেতনতা
বৃদ্ধি—এ তিনটি একসাথে
কাজ করলেই প্রকৃতির এই ক্ষতি কিছুটা
হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে,
গাছ শুধু পরিবেশের নয়,
আমাদের অস্তিত্বেরও প্রধান ভরসা।
কোন মন্তব্য নেই