সাহারা: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমির বিস্ময়কর গল্প
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারা, যা আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৯৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার, যা উত্তর আফ্রিকার বিশাল অংশ জুড়ে অবস্থিত। সাহারা বিস্তৃত মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সুদান, নাইজার ও মালি পর্যন্ত।
সাহারার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য সত্যিই চমকপ্রদ। এখানে রয়েছে পাহাড়, মালভূমি, বালির সমুদ্র এবং অনুর্বর শুষ্ক ভূমি। তবে কিছু এলাকাকে মরূদ্যান বলা হয়, যেখানে মানুষ বসবাস করে। মরূদ্যানগুলোর আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যাযাবর উপজাতিগুলো সাহারার আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সাহারার জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখের মতো। অধিকাংশ মানুষ এখানে ছাগল, ভেড়া ও উট পালন করে। মরূদ্যানে চাষ হয় খেজুর, গম ও বার্লির মতো ফসল।
পানির উৎস সাহারার জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার মানুষ মূলত কূপ, প্রস্রবণ বা মরূদ্যানের পানির ওপর নির্ভরশীল। যাযাবররা স্থায়ী বসতি না গড়ে পানির নতুন উৎস খুঁজে নেওয়ায় বিশেষ দক্ষ।
সাহারা যে শুধু অনুর্বর ভূমি, তা নয়। এটি নানা ধরনের মূল্যবান সম্পদে ভরপুর। বিশেষ করে লিবিয়া ও আলজেরিয়ায় প্রচুর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এছাড়াও সাহারায় তামা, লোহা ও ফসফেটের মতো খনিজ পদার্থের প্রাচুর্য দেখা যায়।
সাহারার আবহাওয়া চরম রকমের। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম থাকে, কিন্তু রাতে ঠাণ্ডা নেমে আসে। কখনো কখনো পাহাড়ের চূড়ায় বরফ জমতেও দেখা যায়। শীতকালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে, আর গ্রীষ্মকালে এটি ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ২০ সেন্টিমিটার। এছাড়া ধূলিঝড়ও এখানে নিয়মিত ঘটনা।
বৃক্ষহীন মনে হলেও সাহারার কিছু অঞ্চলে গাছপালা জন্মে। মরূদ্যান ছাড়াও মরুভূমির কিছু স্থানে ঘাস, গুল্ম এবং ছোট গাছ জন্মাতে দেখা যায়। এসব গাছ মাটির গভীর থেকে পানি সংগ্রহ করে, কখনো বাতাস থেকে পাতার মাধ্যমে জলীয় বাষ্প শোষণ করে।
সাহারার প্রাণীজগৎও সীমিত। এখানে উট, মরুভূমির শেয়াল, সাপ, গিরগিটি, উটপাখি, অ্যাডেক্স অ্যান্টিলোপ, গাজলা হরিণ ও মরুছাগলের মতো প্রাণীদের দেখা মেলে।
অবশ্য প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা বলছে, দশ হাজার বছর আগে সাহারার পরিবেশ এতটা চরম ছিল না। বরং সেই সময় এটি ছিল বেশ উর্বর। তখন এখানে ছিল হ্রদ, ছোট ছোট নদী, এবং চড়ে বেড়াত হাতি ও জিরাফের মতো প্রাণী।
সাহারা মরুভূমি তার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ও সম্পদে সত্যিই বিস্ময়কর। একদিকে এটি কঠোর পরিবেশের প্রতীক, অন্যদিকে জীবনের এবং ইতিহাসের এক অসামান্য নিদর্শন।
কোন মন্তব্য নেই